১৯০১ খ্রিস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ জেলার আয়তন ছিল ৪৬৪২ বর্গমাইল। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে এ জেলায় ৪টি মহকুমা ও ১৫টি থানা ছিল। বরিশাল সদরের অধীনে ছিল- কোতোয়ালি, নলছিটি, ঝালকাঠি, গৌরনদী, মেহেন্দিগঞ্জ। পিরোজপুর মহকুমার অধীনে ছিল পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, ভাণ্ডারিয়া, স্বরূপকাঠি ও কাউখালী। দক্ষিণ শাহবাজপুর মহকুমার অধীনে ছিল ভোলা ও বোরহানউদ্দীন। পটুয়াখালী মহকুমার অধীনে ছিল পটুয়াখালী, বাউফল, গলাচিপা, আমতলী। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে গুলিসাখালী থানা আমতলীতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জেলায় ৫টি মহকুমা ছিল। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল সদর মহকুমাকে উত্তর ও দক্ষিণ মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। সদর দক্ষিণ মহকুমার প্রথম এসডিও ক্ষিরোদ লাল মুখার্জী এবং সদর উত্তর মহকুমার প্রথম এসডিও রাধিকা লাল দে। জেলায় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ২৭টি এবং ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ৩২টি থানা ছিল। মেহেন্দিগঞ্জ হতে হিজলা, মঠবাড়িয়া হতে বামনা, পিরোজপুর ও স্বরূপকাঠি হতে কাউখালী, ভোলা হতে দৌলতখাঁ, বোরহানউদ্দিন হতে তজুমদ্দিন, পটুয়াখালী হতে মির্যাগঞ্জ ও বেতাগী সৃষ্টি হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ভাণ্ডারিয়া হতে কাঁঠালিয়া, মঠবাড়িয়া হতে পাথরঘাটা, গৌরনদী হতে উজিরপুর ও স্বরূপকাঠি হতে বানারীপাড়া থানা সৃষ্টি হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের পর আমতলী থানা হতে খেপুপাড়া ও পিরোজপুর হতে নাজিরপুর থানা সৃষ্টি হয়। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ জেলায় ৩৪টি থানা ছিল। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাকেরগঞ্জ জেলা প্রশাসকরা প্রায় সকলেই স্বৈরাচারী ছিলেন। কিন্তু এদের মধ্যে নিকোলাস বিটসন বেল ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি বরিশালে মোট ১০ বছর ছিলেন। মানুষের প্রতি ছিল বেল সাহেবের অত্যধিক ভালবাসা। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে নলছিটি থানায় প্লেগ রোগ দেখা দেয়। একটি পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্লেগ রোগে প্রাণ হারায়। অথচ তাদের সৎকার করতে কেউ আসেনি। এ কথা শুনে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃতদেহগুলো সৎকার করার ব্যবস্থা করেন। বেল ইসলামিয়া হোস্টেল, ব্রজমোহন ও রাজচন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠার তার অবদান চিরস্মরণীয়। বরিশালের জনগণের জন্য তিনি অনেক কল্যাণকর কড় করেন। খেলাধুলার জন্য তিনি বরিশাল শহরের দক্ষিণ প্রান্তে একটি মাঠ নির্মাণ করেন যা বেল পার্ক বলে খ্যাত। তার শেষ্ঠ কীর্তি দশসালা জরিপ। ১৯০৪
খ্রিস্টাব্দের জুন-জুলাই মাসে বাংলার ছোট লাট এন্ড্রু হেন্ডার লিথা ফ্রেজার বরিশাদে আগমন করেন এবং তিনি জরিপ কাজ পরিদর্শন করে বেল সাহেবের ভয়সী প্রশসে করেন। মি. বেল পরবর্তীকালে আসামের গভর্নর ছিলেন। মিঃ ডি ডব্লিউ ওয়ারেস ১৯১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর ছিলেন। তার সময় ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান জেলা প্রশাসকের বাসভবন নির্মিত হয়। ইতিপূর্বে বর্তমান টেলিফোন অফিস প্রাঙ্গণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভবন ছিল। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ২ মার্চ কুলকাঠি গ্রামে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ব্লান্ডির উপস্থিতিতে ১৯ জন মুসলমানকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। মিঃ এফও বেল ও পামারের সময় বাংলা ১৩৫০ সনের দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তারা ক্ষুধার্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। দুর্ভিক্ষের ভয়াল দিনগুলোর মাঝে টিআইএম নুরুন্নবী ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে জেলার প্রথম বাঙালী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর নিযুক্ত হয়ে আসেন। তিনি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ নিয়ে দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণকে বাঁচাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এসবি হ্যাজ বার্নওয়েল ইংরেজ আমলে বরিশালের শেষ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। প্রত্যেক মহকুমায় একজন এসডিও ছিলেন। এসডিওদের মধ্যে পটুয়াখালীতে আবদুল লতিফ, সৈয়দ মোঃ ইসহাক, আখতার হামিদ খান, আজিজ আহমেদ কর্মচারী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। সৈয়দ মোঃ ইসহাক কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। তার সময় পটুয়াখালী মহকুমায় কয়েকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
তথ্যসূত্র: বরিশাল বিভাগের ইতিহাস, লেখক: সিরাজ উদ্দীন আহ্মেদ
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস